গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম


গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এ সময়ে শরীরে ঘটে নানা ধরনের পরিবর্তন। এই সময় খাবার শুধু মায়ের শরীরে চাহিদায় পূরণ করে না বরং তার শিশুর বুদ্ধি বিকাশেও সাহায্য করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর এই সময় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।

চিয়া সিড এ রয়েছে ক্যালসিয়াম,প্রোটিন,অ্যাসিড,ফাইবার,আয়রন প্রটিন যা মা ও শিশুর জন্য উপকারী। চলুন চিয়া সিডের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় চিয়া চিড খাওয়ার নিয়ম


গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতাঃ

চিয়া সিডকে সুপারফুড বলা হয়। কারণ এতে আইরন, প্রোটিন, ফাইবার ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ক্যালসিয়াম ,এসিড রয়েছে। আর এই সবগুলো একজন আর গর্ভবতী নারীর প্রয়োজন।

চিয়া সিডে রয়েছে এসিডের উৎস যা শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্ত বৃদ্ধির করে এবং শিশুর হাড় দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় চিয়া সিডে ফাইবার থাকে যার সাহায্যে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে  যায়। চিয়া সিডে প্রোটিন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা মায়ের শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি কমাতে সহায়ক। চিয়া সিডে ফাইবার থাকায় গর্ভবতী মেয়েদের অনেক সময় পেট ভরা থাকে।

এছাড়াও চিয়া সিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় ফলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয় এবং ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণঃ

চিয়া সিট পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং জনপ্রিয় একটি খাবার। চিয়া সিডের স্বাদ গন্ধ নেই তাই এর পুষ্টি মাত্রা বাড়ানোর জন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে গন্ধ না থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় সকল নারীরাই যে কোন খাবারের সঙ্গে সহজে মিশিয়ে খেতে পারেন।

চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন শিশুর কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে সহায়তা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে আরও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যার রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। 

আমাদের প্রত্যেকেরই চিয়া সিড খাওয়া জরুরী কারণ ক্যালসিয়াম,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,প্রোটিন,আইরন, ফাইবার রয়েছে। যেগুলো না থাকলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি ঘটে।


আরও পরুনঃ ডাটা এন্ট্রি ফ্রিলেন্সিং টাইপস

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জীবনে একটি শরীর বৃত্তীয় পরিবর্তন। যে সময় মেয়েরা নানা ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যাস,বদহজম,অ্যাসিডিটি।

এজন্য চিয়া সিড এটি সুপারফুড নামে পরিচিত। কারণ এতে ফাইবার আছে যা খেলে গ্যাস,বদহজম, অ্যাসিডিটি দূর হয়ে যাই। এছাড়া চিয়া সিডে থাকা ফাইবার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড  খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রেখে ১ থেকে ২ চা চামচ চিয়া সিড ১০ থেকে ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে সহজে হজম হয়।

চিয়া সিড দই,দুধ,ফলের জুস বা স্মুদিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে নাস্তায় ওটমিল,গ্রানোলা বা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যায়।চিয়া সিড মধু ও লেবুর রস দিয়ে স্বাস্থ্যকর চা বানানো যায়।

 কিডনি ভালো রাখতে চিয়া সিডের উপকারিতাঃ

চিয়া সিড আমাদের কিডনির জন্য অনেকটাই ভালো। কারণ চিয়া সিডে রয়েছে ফাইবার,প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল যা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।যার ফলে কিডনির ওপর চাপ কমে যায় এবং চিয়া সিডে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দেয়। 

চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর কিডনির কোষ গুলোকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং উচ্চমাত্রায় থাকা প্রোটিন কিডনির টিস্যু মেরামত সাহায্য করে যার ফলে নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া আমাদের পক্ষে অত্যন্ত ভালো। 


বাচ্চাদের চিয়া সিট খাবার নিয়মঃ

চিয়া সিডে থাকা তিন ফ্যাটি অ্যাসিড যা বাচ্চাদের ব্রেইনের বিকাশে এবং বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। চিয়া সিডে থাকা ফাইবার শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

 শিশুদের দৈনিক চাহিদার প্রায় 42% আইরন এই চিয়া সিড থেকে আসে।তাই শিশুদের জন্য চিয়া সিড নিয়মিত খাওয়া ভালো।

আরও পরুনঃফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার

ওজন কমাতে চিয়া সিডের ভূমিকা এবং খাবার নিয়মঃ

আপনারা অনেকেই ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে চলুন দেখি চিয়া সিড ওজন কমানোর জন্য কার্যকারী কিনা।

 চিয়া সিডে থাকে ফাইবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও চিয়া সিড ও লেবুর মিশ্রণ শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে দেয়। চিয়া সিড মেটাবলিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যা আমাদের শরীর কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তবে আমাদের চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি ডায়েট করাও জরুরি এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার তাহলেই আমাদের ওজন কমবে।

চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতিঃ

চিয়া সিড বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে 10 থেকে 15 মিনিট পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ।মধু অথবা লেবুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে স্বাদ বাড়াতে। এটি সকালের বিভিন্ন নাস্তার সাথে খেতে পারেন।

১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আমরা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি অথবা ফল,বাদাম এর সাথেও মিশে ১ টেবিল চামচ খেতে পারি। আবার জুস বানিয়ে খেতে পারি। ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আমরা সালাদের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারি আবার কেক,ব্রেড বা ব্যাটারে মিশিয়ে খেতে পারি।


ত্বক ও চুলের যত্নে চিয়া সিডের ব্যবহারঃ

শুষ্ক রুক্ষ ত্বকে জলীয়ভাব ফিরিয়ে আনতে চিয়া সিডের তুলনা হয় না।১ চা চামচ চিয়া সিড সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে একটি জেল তৈরি করতে হবে। তারপর ত্বকে লাগাতেকে। ভিটামিন ই রোদে পোড়া ত্বকের দাগ দূর করে। সূর্যের নানা রকম জ্বালার অনুভূতি থেকে রক্ষা করে। চিয়া সিডের নির্যাসে থাকে ভিটামিন এফ যা ভেতর থেকে ত্বককে সুস্থ ও সতেজ করে।

চুলের যত্নে চিয়া সিডের হেয়ারমাক্স দুর্দান্ত কাজ করে।এটি বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারবেন। একটি গ্লাসে জলে এক চামচ ভিজিয়ে রাখুন জলের আকার ধারণ করলে এতে ৬ চামচ নারকেল তেল ২ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আর অর্ধেক কাপ মধু মিশিয়ে নিন এবার মিশ্রণটি মাইক্রো ওয়েভে দিয়ে ৩০ সেকেন্ডের জন্য গরম করে নিন এবার এই হেয়ার মাস্ক ঘরের তাপমাত্রায় চলে এলে চুলে লাগিয়ে নিন ৫ থেকে ১০ মিনিট রাখুন এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে শ্যাম্পু করতে পারেন। তাহলে চুলের রুক্ষতাভাব কমতে যাবে।


আরও পরুনঃএড দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট

ডায়াবেটিস ও হার্টের জন্য চিয়ার সিডের গুরুত্বঃ

চিয়া বীজ হলো ক্ষুদ্র বীজ যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। এতে ফাইবার প্রটিন থাকে। যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ ফাইবার থাকার জন্য পেত অনেক্ষন ভরা থাকে যা অতিরিক্ত  খাবার গ্রহন কমাতে সাহায্য করে।ওজন নিয়ন্ত্রণ এই রোগের জন্য অনেক ভালো সুবিধা।

হার্টের সুস্থতার জন্য চিয়া সিড খুবই উপকারী।এটি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়,প্রদাহ কমে,রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে,উন্নত রক্ত সঞ্চালন করে। এতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে যা হৃদরোগে ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা ফাইবার রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, যা হার্টের জন্য ভালো। চিয়া সিডে থাকা এসিড হতে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে  তাই এটি ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

সতর্কতাঃ

চিয়া সিড আমাদের জন্য ভালো কিন্তু তবুও এটি অতিরিক্ত পরিমানের খেলে অনেক সমস্যা হয়।পরিমান মতো খাওয়া প্রয়োজন।

পরিমান মতো না খেলে উচ্চ ফাইবারের কারনে পেটে গ্যাস,বদহজম,ডায়রিয়া হতে পারে।বেশি চিয়া সিড খেলে পাকস্থলী  অন্ত্রে অসস্থি হয়।এটি বেশি খেলে স্তন ক্যান্সার কষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আর আমাদের সবারই উচিত কোন অসুস্থতাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যে কোন কিছু খাওয়া।

উপসংহারঃ

এতক্ষন আমরা চিয়া সিড সম্পর্কে জেনেছি।এতে অনেক পুষ্টি রয়েছে। আবার এটি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে।তাই এটি খাওয়ার আগে আমাদের সতর্কতা  অনুযায়ী খাওয়া উচিত।

এতক্ষন এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক  ধন্যবাদ।এমন আরও আর্টিকেল পড়তে ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url